Science Therapy

কাজ, শক্তি, ক্ষমতা ও গতি

[আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে কোনো কিছু করাকে কাজ বলা হলেও পদার্থবিজ্ঞানে কাজ দ্বারা একটি সুনির্দিষ্ট ধারণাকে বুঝায়। এই অধ্যায়ের শুরুতে আমরা সেই ধারণাকে উপস্থাপিত করব। বিজ্ঞানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে শক্তি। আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে দেখি শক্তি ছাড়া জগৎ অচল। বিভিন্নরূপে আমরা শক্তি পাই। গতিশীল বস্তুর জন্য গতিশক্তি, ভূপৃষ্ঠের খানিক উপরে বস্তুর অবস্থানের জন্য বিভব শক্তি, একটি সংকোচিত বা প্রসারিত স্প্রিং এর শক্তি, গরম বস্তুর তাপ শক্তি, আহিত বস্তুর তড়িৎ শক্তি ইত্যাদি। শক্তি ক্রমাগত এক রূপ থেকে অন্য রূপে রূপান্তরিত হচ্ছে, যদিও মহাবিশ্বের মোট শক্তির পরিমাণ অপরিবর্তনীয় এবং সুনির্দিষ্ট। এই অধ্যায়ে আমরা শক্তির রূপান্তরের ঘটনা এবং বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ নীতিগুলোর একটি শক্তির সংরক্ষণশীলতার নীতি নিয়ে আলোচনা করব।]
Contents [hide]
1 ৪.১ কাজWork
2 ৪.২ শক্তিEnergy
3 ৪.৩ শক্তির প্রধান উৎসPrime sources of energy
4 ৪.৪ শক্তির রূপান্তরTransformation of energy
5 ৪.৫ ক্ষমতাPower
6 ৪.৬ কর্মদক্ষতাEfficiency
৪.১ কাজ
Work[edit]

কাজ, শক্তি, ক্ষমতা ও গতি
দৈনন্দিন জীবনে কোনো কিছু করাকে কাজ বললেও বিজ্ঞানে কিন্তু কোনো কিছু করা হলেই কাজ হয় না। বিজ্ঞানে কাজ একটি বিশেষ অর্থ বহন করে। একজন দারোয়ান সারাক্ষণ বসে বসে একটি বাসা পাহারা দিলেন। তিনি বলবেন তিনি তার কাজ করেছেন। কোনো স্রোতের নদী বা খালে একটি নৌকা ভেসে যাচ্ছিল, করিম সাহেব সেটাকে টেনে ধরে রাখছেন। তিনি বলবেন তিনি কাজ করে নৌকাটিকে ঠেকিয়ে রেখেছেন নতুবা সেটি স্রোতের টানে কোথায় ভেসে যেত। দৈনন্দিন জীবনে এগুলোকে কাজের স্বীকৃতি দিলেও বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে কিন্তু এগুলো কাজ হয়নি। বরং দারোয়ান বসে বসে পাহারা না দিয়ে যদি হেঁটে হেঁটে পাহারা দিতেন কিংবা নৌকাটি যদি স্রোতের টানে ভেসে যেত তাহলে কিছু কাজ হতো। বিজ্ঞানে কাজের অর্থ দৈনন্দিন জীবনে কাজের অর্থের চেয়ে ভিন্নতর। আসলে বিজ্ঞানে কাজ হতে গেলে বল ও তার সাথে সরণ সংশ্লিষ্ট থাকতে হয়। কোনো বস্তুর উপর কোনো বল ক্রিয়া করে যদি বস্তুটির কিছু সরণ ঘটায় তাহলে কেবল কাজ হয়। আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমাদের চারপাশে কাজের অনেক উদাহরণ দেখতে পাই। বলদ মাঠে লাঙল টানছে, একজন শ্রমিক ঠেলা গাড়ি ঠেলছেন, ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় কেউ লৌহ গোলক নিক্ষেপ করছে ইত্যাদি।
নিচের উদাহরণগুলো বিবেচনা করা যাক:
(ক) রতন এক প্যাকেট বই হাত দিয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
(খ) মিতা পদার্থবিজ্ঞান বইখানাকে ঠেলে টেবিলের উপর দিয়ে এক প্রান্তথেকে অন্য প্রান্তেনিয়ে যচ্ছে।
(গ) নীরুএকটি ভারী ব্যাগকে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠাচ্ছে।
(ঘ) রিমি জোরে দেয়ালকে ঠেলছে।
যেহেতু একটি বল দ্বারা কোনো বস্তু গতিশীল হলেই কেবল কাজ হয়, সুতরাং উল্লিখিত উদাহরণগুলোতে (খ) এবং (গ)-এর ক্ষেত্রে কাজ হয়েছে; কিন্তু (ক) এবং (ঘ) এর ক্ষেত্রে কোনো কাজ হয়নি। আমরা কোনো বস্তুকে উপরে উঠাতে বা নিচে নামাতে বা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিতে বল প্রয়োগ করতে পারি। আমরা বল প্রয়োগ করে কোনো বস্তুর আকার পরিবর্তন করতে পারি। এ সকল ক্ষেত্রে কাজ হয়।
যদি একজন নির্মাণ শ্রমিক দশখানা ইট নিয়ে কোনো ভবনের দোতলায় উঠেন, তবে তিনি একখানা ইট নিয়ে ঐ দোতলায় উঠলে যে কাজ করতেন তার চেয়ে বেশি কাজ করবেন, কেননা তাকে বেশি বল প্রয়োগ করতে হয়। তাকে আরো বেশি কাজ করতে হবে যদি তিনি ঐ দশখানা ইটই তিনতলায় উঠান। সুতরাং কাজের পরিমাণ নির্ভর করে প্রযুক্ত বলের উপর এবং দূরত্বের উপর। কোনো বস্তুর উপর প্রযুক্ত বল এবং বলের দিকে বস্তুর অতিক্রান্তদূরত্বের গুণফল দ্বারা কাজ পরিমাপ করা হয়। সুতরাং,
কাজ = বল × বলের দিকে অতিক্রান্ত দূরত্ব।
Kajer durotto.jpg
কোনো বস্তুর উপর F বল প্রয়োগে যদি বস্তুটি বলের দিকে s দূরত্ব অতিক্রম করে (চিত্র ৪.১) তবে কৃত কাজ W হবে,
W= Fs ....................(৪.১)
কাজের কোনো দিক নেই। কাজ একটি স্কেলার রাশি।
কাজের মাত্রা: কাজের মাত্রা হবে বল × সরণের মাত্রা
কাজ = বল × সরণ = ভর × ত্বরণ × সরণ
Screenshot 11ga.jpg





[W]==
কাজের একক: বলের একককে দূরত্বের একক দিয়ে গুণ করলে কাজের একক পাওয়া যায়। যেহেতু বলের একক নিউটন (N) এবং দূরত্বের একক হলো মিটার (m), সুতরাং কাজের একক হবে নিউটন-মিটার (Nm)। একে জুল বলা হয়। জুলকে J দিয়ে প্রকাশ করা হয়। কোনো বস্তুর উপর এক নিউটন বল প্রয়োগের ফলে যদি বস্তুটির বলের দিকে এক মিটার সরণ হয় তবে সম্পন্ন কাজের পরিমাণকে এক জুল বলে।
1J+ 1Nm
যদি বল প্রয়োগের ফলে বস্তু বলের দিকে সরে যায় তাহলে সেই কাজকে বলের দ্বারা কাজ বলে।
একটি ডাস্টার টেবিলের উপর থেকে মেঝেতে ফেলে দিলে ডাস্টারটি অভিকর্ষ বলের প্রভাবে নিচের দিকে পড়বে। এক্ষেত্রে অভিকর্ষ দ্বারা কাজ হয়েছে।
যদি বল প্রয়োগের ফলে বস্তু বলের বিপরীত দিকে সরে যায় তাহলে সেই কাজকে বলের বিরুদ্ধেকাজ বলে।
একটি ডাস্টার যদি মেঝে থেকে টেবিলের উপর উঠানো হয় তাহলে অভিকর্ষ বলের বিরুদ্ধেকাজ হবে। কেননা, এ ক্ষেত্রে অভিকর্ষ বল যে দিকে ক্রিয়া করে সরণ তার বিপরীত দিকে হয়।
অনলাইনে সরাসরি সহায়তা
এই বিষয়টিতে অনলাইনে সহায়তা নিতে
ইমেইল করুন notunboi.com@gmail.com এ।
প্রতি মিনিট ১টাকা চার্জ প্রযোজ্য হবে। 
গাণিতিক উদাহরণ ৪.১: 70 kg ভরের এক ব্যক্তি 200m উঁচু পাহাড়ে আরোহণ করলে তিনি কত কাজ করবেন?
আমরা জানি,
W= Fs
= 686N× 200m
= 1.372×
উত্তরঃ 1.372×  এখানে,
ব্যাক্তির ভর, m= 70kg
বল, F= ব্যাক্তির ওজন=mg
=70kg×
=686N
সরণ, s= 20m
কাজ, W= ?
৪.২ শক্তি
Energy[edit]

কাজ, শক্তি, ক্ষমতার গভীর ধারণা
শক্তি ছাড়া কোনো কিছু চলতে বা কাজ করতে পারে না। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য শক্তির প্রয়োজন হয়। প্রতিদিন আমরা যে কাজ করি তা নির্ভর করে আমাদের কতটুকু শক্তি আছে তার উপর। আমরা যে খাবার খাই তা থেকে এ শক্তি পাই। উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য শক্তি লাগে। কোনো যন্ত্রের কাজ করার জন্য শক্তির প্রয়োজন হয়। কোনো কোনো যন্ত্র বিদ্যুৎ ব্যবহার করে আবার কোনোটা জ্বালানি পুড়িয়ে শক্তি পায়। জ্বালানির মধ্যে শক্তি সঞ্চিত থাকে।
শক্তি বলতে আমরা কী বুঝি? শক্তি বলতে কোনো বস্তুর কাজ করার সামর্থ্যকে বুঝে থাকি। যে বস্তু কাজ করতে সমর্থ তার মধ্যেই শক্তি থাকে, যে বস্তু কাজ করতে সমর্থ না তার মধ্যে কোনো শক্তি থাকে না।
আমরা যখন বলি কোনো বস্তুর মধ্যে শক্তি নিহিত আছে, তখন আমরা বুঝি বস্তুটি অন্য কিছুর উপর বল প্রয়োগ করতে পারে এবং তার উপর কাজ সম্পাদন করতে পারে। আবার আমরা যখন কোনো বস্তুর উপর কাজ করে থাকি, তখন আমরা তার উপর কাজের সমপরিমাণ শক্তি যোগ করে থাকি।
কোনো বস্তুর কাজ করার সামর্থ্যই হচ্ছে শক্তি। কাজ করা মানে শক্তিকে এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় রূপান্তরিত করা। এর অর্থ হচ্ছে বস্তুটি সর্বমোট যে পরিমাণ কাজ করতে পারে তাই হচ্ছে শক্তি। যেহেতু কোনো বস্তুর শক্তির পরিমাপ করা হয় তার দ্বারা সম্পন্ন কাজের পরিমাণ থেকে, সুতরাং শক্তি ও কাজের পরিমাণ অভিন্ন।
অতএব, কৃত কাজ = ব্যয়িত শক্তি
শক্তির কোনো দিক নেই। কাজেই শক্তি স্কেলার রাশি।
শক্তির একক ও কাজের একক একই এবং তা হলো জুল (J)।
শক্তির বিভিন্ন রূপ: বিভিন্ন প্রকার কাজ করার জন্য আমাদের বিভিন্ন ধরনের শক্তির প্রয়োজন হয়। যেমন পানি গরম করতে হলে তাপ শক্তির প্রয়োজন হয়। একটি বৈদ্যুতিক বাল্ব থেকে আমরা আলো শক্তি পাই। আমরা যে সংগীত শুনি তার মধ্যে শব্দ শক্তি নিহিত আছে। কোনো বস্তুকে আমাদের সরাতে বা উপরে উঠাতে পেশি শক্তির প্রয়োজন হয়। কোনো বৈদ্যুতিক যন্ত্রকে চালাতে হলে বিদ্যুৎ শক্তির প্রয়োজনহয়। তড়িৎ কোষে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা রাসায়নিক শক্তি পাই। এক টুকরা কাগজ বায়ু শক্তির কারণে উড়ে যায়। যখন পরমাণুসমূহ জোড়া লাগে বা ভাঙে তখন নিউক্লীয় শক্তি নির্গত হয়।
শক্তি আছে বলেই জগৎ গতিশীল। শক্তি না থাকলে জগৎ অচল হয়ে পড়বে। আলো শক্তি আছে বলেই আমরা দেখতে পাই, শব্দ শক্তি আছে বলেই আমরা শুনতে পাই। যান্ত্রিক শক্তির বদৌলতে আমরা চলাফেরা করতে পারি। বিদ্যুৎ শক্তির সাহায্যে পাখা ঘুরছে, কলকারখানা চলছে। এ মহাবিশ্বে শক্তি নানারূপে বিরাজ করছে। মোটামুটিভাবে আমরা শক্তির নিম্নোক্ত রূপগুলো পর্যবেক্ষণ করি। যথাÑ যান্ত্রিক শক্তি, তাপ শক্তি, শব্দ শক্তি, আলোক শক্তি, চৌম্বক শক্তি, বিদ্যুৎ শক্তি, রাসায়নিক শক্তি, নিউক্লীয় শক্তি এবং সৌর শক্তি।
শক্তির সবচেয়ে সাধারণ রূপ হচ্ছে যান্ত্রিক শক্তি। কোনো বস্তুর অবস্থান বা গতির কারণে তার মধ্যে যে শক্তি নিহিত থাকে তাকে যান্ত্রিক শক্তি বলে। এই অনুচ্ছেদে আমরা যান্ত্রিক শক্তির দুটি ভাগÑ গতির কারণে যে শক্তি গতিশক্তি এবং অবস্থানের কারণে যে শক্তি বিভব শক্তি তা নিয়ে আলোচনা করব।
গতিশক্তি: আমরা ক্রিকেট খেলায় দেখতে পাই অনেক সময় ক্রিকেট বল স্টাম্পকে আঘাত করে তাকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। কোনো কাচের জানালায় শক্ত কিছু আঘাত করলে কাচ ভেঙে যায়। ঢিল ছুঁড়ে আম বা বরই পাড়া যায়। এ উদাহরণগুলো থেকে দেখা যায় যে, গতিশীল বস্তুর মধ্যে শক্তি থাকে। কোনো গতিশীল বস্তু তার গতির জন্য কাজ করার যে সামর্থ্য লাভ করে তাকে গতিশক্তি বলে।
নিজে কর: তোমার সামনের টেবিলের বা ডেস্কের ওপর একটি কলম রাখ। কলমের সামনে একটি হালকা বস্তু রাখ। কলমটিকে ঐ বস্তুর দিকে হাত দিয়ে টোকা দাও।
বস্তুটি জায়গা থেকে সরে গেল কেন? টোকার ফলে কলমটি গতিশীল হলো। এতে তার মধ্যে কাজ করার সামর্থ্য তথা গতিশক্তি জন্মাল। সে জন্য বস্তুকে সরাতে পারল।
কোনো স্থির বস্তুতে বেগের সঞ্চার করা আর গতিশীল বস্তুর বেগ বৃদ্ধিকরার অর্থ হচ্ছে বস্তুটিতে ত্বরণ সৃষ্টি করা। আর এ জন্য বল প্রয়োগ করতে হবে। ফলে বস্তুর উপর কাজ করা হবে। এতে বস্তুটি কাজ করার সামর্থ্য লাভ করবে এবং এ কাজ বস্তুতে গতিশক্তি হিসেবে জমা থাকবে। সে কারণে সকল সচল বস্তুই গতিশক্তির অধিকারী। বস্তু স্থিতিতে আসার পূর্বে এ পরিমাণ কাজ সম্পন্ন করতে পারবে।
ধরা যাক, m ভরের একটি স্থির বস্তুর উপর F বল প্রয়োগ করায় বস্তুটি v বেগ প্রাপ্ত হলো। ধরা যাক, এ সময় বস্তুটি বলের দিকে s দূরত্ব অতিক্রম করে। বস্তুটিকে এই বেগ দিতে কৃত কাজই বস্তুর গতিশক্তি।
Gotishokti.jpg
গতিশক্তি = কৃত কাজ
= বল × সরণ
= F × s
বা, = mas [ F= ma]
কিন্তু,
বা,  [ আদি বেগ u= 0]
 = ½ mv²
গতিশক্তি = ½ ভর × (বেগ)²
গতিশক্তি বস্তুর ভরের উপর নির্ভর করে। বস্তুর ভর যত বেশি হয় তার গতিশক্তিও তত বেশি হয়। একই বেগে তোমার দিকে একটি হালকা টেনিস বল আর একটি ভারী ক্রিকেট বল নিক্ষেপ করা হলে ক্রিকেট বল কর্তৃক আঘাত বেশি হবে।
গতিশক্তি বেগের উপরও নির্ভর করে। বস্তুর বেগ বেশি হলে তার গতিশক্তিও বেশি হবে। একটি ট্রাক কম বেগে কোনো দেয়ালকে আঘাত করলে যে ক্ষতি হবে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হবে ঐ ট্রাকটি যদি বেশি বেগে ঐ দেওয়ালকে আঘাত করে।
গাণিতিক উদাহরণ ৪.২: 70 kg ভরের একজন দৌড়বিদের গতিশক্তি 1775 J হলে তার বেগ কত?
আমরা জানি
= ½ mv²
বা, v²=
v=


উত্তরঃ এখানে,
ভর, m= 70kg
গতিশক্তি,
বেগ, v= ?
বিভব শক্তি: ছাদের উপর থেকে এক খণ্ড পাথর বা ইট কোনো বস্তুর উপর পড়লে তাকে চ্যাপ্টা করে ফেলতে পারে বা ভেঙে ফেলতে পারে। পাথর বা ইট যখন ছাদের উপর স্থির ছিল তখন তার মধ্যে শক্তি জমা ছিল। পাথরটি যখন নিচে পড়ে তখন ঐ শক্তি কাজ করে। পাথরটির মধ্যে শক্তি নিহিত ছিল কেননা এটি ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরে ছিল।
একটি স্প্রিংকে টান টান করে এর দুই মাথা দুটি বস্তুর সাথে আটকে ছেড়ে দিলে কী হবে? বস্তুদ্বয় ছুটে এসে পরস্পরের সাথে ধাক্কা খাবে। টান টান স্প্রিং যদিও স্থির অবস্থায় ছিল তথাপি তার মধ্যে শক্তি সঞ্চিত ছিল। স্প্রিংটি ছেড়ে দিলে এটি কাজ করতে পারে। টান টান স্প্রিং -এ শক্তি নিহিত ছিল কেননা এটি বিকৃত অবস্থায় ছিল।
স্বাভাবিক অবস্থান থেকে পরিবর্তন করে কোনো বস্তুকে অন্য অবস্থানে বা স্বাভাবিক অবস্থা পরিবর্তন করে অন্য কোনো অবস্থায় আনলে বস্তু কাজ করার যে সামর্থ্য অর্জন করে তাকে বিভব শক্তি বলে।
Bivob sokti.jpg
সম্প্রসারিত কর্মকাণ্ড: একটি পুলি নিয়ে তার উপর একটি দড়ি পরিয়ে দাও। দড়ির এক প্রান্তে একটি ভারী বস্তু A এবং অপর প্রান্তে হালকা বস্তু B বাঁধ যেন A বস্তু ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরে এবং B বস্তু ভূপৃষ্ঠে থাকে (চিত্র : ৪.৩)। হাত ছেড়ে দাও।
কী দেখতে পেলে? A বস্তু নিচে নামছে আর B বস্তু উপরে উঠছে। A বস্তুটি তার স্বাভাবিক অবস্থান ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরে থাকার কারণে তার ভেতর কাজ করার সামর্থ্য তথা বিভব শক্তি সঞ্চিত ছিল। এটি ভূপৃষ্ঠ পর্যন্তফিরে আসতে কাজ করতে পারে। অর্থাৎ B বস্তুকে উপরে উঠাতে পারে।
পরীক্ষণ: একটি স্প্রিং নিয়ে এর এক প্রান্ত একটি দৃঢ় অবলম্বনের সাথে আটকাও এবং অপর প্রান্তে একটি ব্লক সংযুক্ত কর। এগুলোকে একটি মসৃণ তলের উপর স্থাপন কর। এখন ব্লকটিতে বল প্রয়োগ করে স্প্রিংটিকে সংকুচিত কর এবং ব্লকটির সামনে অন্য একটি বস্তু রাখ (চিত্র : ৪.৪)। এখন হাত ছেড়ে দাও।
Bibhob sokti.jpg
বস্তুটি ছিটকে দূরে সরে গেল কেন? স্প্রিংটি তার আগের শিথিল অবস্থানে ফিরে আসার সময় কাজ করতে পারল Ñ অন্য বস্তুকে সরাতে পারল। স্প্রিংটি এই যে তার স্বাভাবিক অবস্থা পরিবর্তনের জন্য কাজ করার সামর্থ্য লাভ করল সেটি তার বিভব শক্তি। স্বাভাবিক অবস্থান বা অবস্থা থেকে পরিবর্তন করে কোনো বস্তুকে অন্য কোনো অবস্থান বা অবস্থায় আনতে যদি কোনো বলের বিরুদ্ধেকোনো কাজ করা হয় তখন বস্তুটি ঐ পরিমাণ কাজ করার সামর্থ্য লাভ করে অর্থাৎ শক্তি সঞ্চয় করে। এই কথাটি খাটে সংরক্ষণশীল বল যথা মহাকর্ষ বল, তড়িৎ বল, চৌম্বক বল, স্প্রিং বল ইত্যাদির প্রভাব বলয়ের মধ্যে। এই প্রভাব বলয়কে ঐ বলের বলক্ষেত্র বলা হয়। যেমন মহাকর্ষ ক্ষেত্র, তড়িৎ ক্ষেত্র ইত্যাদি। আমরা যখন ভূপৃষ্ঠ থেকে কোনো বস্তুকে উপরে তুলি তখন অভিকর্ষ বলের বিরুদ্ধেকাজ করি। ফলে ঐ বস্তু কিছু বিভব শক্তি লাভ করে। বস্তুটি যদি ভূপৃষ্ঠে পড়ে তখন ঐ পরিমাণ কাজ করতে পারে।
সভরের কোনো বস্তুকে ভূপৃষ্ঠ থেকে যউচ্চতায় (চিত্র : ৪.৫) উঠাতে কৃত কাজই হচ্ছে বস্তুতে সঞ্চিত বিভব শক্তির পরিমাপ। আর এ ক্ষেত্রে কৃত কাজ হচ্ছে বস্তুর উপর প্রযুক্ত অভিকর্ষ বল তথা বস্তুর ওজন এবং উচ্চতার গুণফলের সমান।
বিভব শক্তি = বস্তুর ওজন × উচ্চতা
= mgh
 ............................ (4.3) অর্থাৎ, বিভব শক্তি = বস্তুর ভর × অভিকর্ষজ ত্বরণ × উচ্চতা
বিভব শক্তি ভূপৃষ্ঠ থেকে বস্তুর উচ্চতার উপর নির্ভর করে। উচ্চতা যত বেশি হবে, বিভব শক্তিও তত বেশি হবে। বিভব শক্তি বস্তুর ভরের উপরও নির্ভর করে। ভর যত বেশি হবে বিভব শক্তিও তত বেশি হবে।
কোনো বস্তুর মধ্যে বিভব শক্তি থাকলে এবং তাকে ব্যবহার করতে হলে এটিকে আগে অন্য শক্তিতে রূপান্তর করে নিতে হবে। যেমন ছাদের উপর থাকা পাথর খণ্ডটি ততক্ষণ বিপজ্জনক নয় যতক্ষণ না এর বিভব শক্তি গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয় অর্থাৎ এটি ছাদ থেকে পড়া শুরু করে।
গাণিতিক উদাহরণ ৪.৩: একটি বস্তুর ভর 6kg। একে ভূপৃষ্ঠ থেকে 20m উচ্চতায় তুললে বিভব শক্তি কত হবে?
g =
আমরা জানি,

=6kg× × 20m
= 1176 J
উত্তরঃ 1176 J  এখানে,
বস্তুর ভর, m= 6kg
উচ্চতা, h= 20m
g=
বিভব শক্তি, = ?
৪.৩ শক্তির প্রধান উৎস
Prime sources of energy[edit]
যন্ত্রনির্ভর বর্তমান সভ্যতা শক্তি ছাড়া এক মুহূর্তও চলতে পারে না। শক্তির বিনিময়ে কাজ পাওয়া যায়। সকল জীবের বেঁচে থাকার জন্য শক্তির নিরবচ্ছিন্ন যোগান থাকতে হবে। জীবন যাত্রার মানোন্নয়নের সাথে মানুষের শক্তির চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বাড়তি শক্তির প্রয়োজনে মানুষকে নিত্যনতুন শক্তির উৎসের সন্ধান করতে হচ্ছে। সৃষ্টিকে টিকিয়ে রাখার জন্য শক্তির যোগান অব্যাহত রাখতে হলে শক্তির উৎস সম্পর্কে আমাদের পরিষ্কার ধারণা থাকা প্রয়োজন। আমরা জানি সূর্যই প্রায় সকল শক্তির উৎস। এ ছাড়াও পরমাণুর অভ্যন্তরে নিউক্লীয়াসের নিউক্লীয় শক্তি ও পৃথিবীর অভ্যন্তরে অবস্থিত গলিত উত্তপ্ত পদার্থ থেকে প্রাপ্ত শক্তিও শক্তির উৎস হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পৃথিবীতে যত শক্তি আছে তার প্রায় সবটাই কোনো না কোনোভাবে সূর্য থেকে আসা বা সূর্য কিরণ ব্যবহৃত হয়েই তৈরি হয়েছে।
রাসায়নিক/জ্বালানি শক্তি:
আদিমকালে মানুষ সকল কাজে পুরোপুরি নির্ভর করত তার পেশি শক্তির উপর। এরপর মানুষ পশুকে বশে আনল এবং পশু শক্তিকে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতে লাগল। পশু শক্তির সাহায্যে কৃষিকাজ, জিনিসপত্র বহন ইত্যাদি কাজ মানুষ করত। কাঠ ও গাছের পাতা পুড়িয়ে তাপ শক্তি সৃষ্টি, জলস্রোত ও বায়ুপ্রবাহ থেকে যন্ত্রশক্তি উৎপন্ন করা ছিল সভ্যতার প্রাথমিক স্তর। যন্ত্রশক্তি ব্যবহারের ফলে মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি শুরুহলো। শিল্প বিপ্লব ও বাষ্পীয় ইঞ্জিনের আবিষ্কার মানুষের ও পশুদের পেশি শক্তির উপর নির্ভরতা কমিয়েদিল। বাষ্প শক্তির সাহায্যে মানুষ বিভিন্ন যান্ত্রপাতি চালাতে থাকল। এ বাষ্প শক্তি উৎপন্ন করার জন্য জ্বালানি প্রয়োজন। বিভিন্ন প্রকার জ্বালানিকেই তাই আমরা শক্তির উৎস হিসেবে বিবেচনা করি।
শক্তির অতি পরিচিত উৎস হলো কয়লা, খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস। ভূঅভ্যন্তরে কয়লা, তেল বা প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া যায় যা সরাসরি বা সামান্য পরিশোধিত করে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
কয়লা: শক্তির উৎসগুলোর মধ্যে কয়লার পরিচিতি সবচেয়ে বেশি। কয়লা একটি জৈব পদার্থ। পৃথিবীতে এক সময় অনেক গাছপালা ছিল। বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও স্বাভাবিকভাবে গাছের পাতা বা কাণ্ড মাটির নিচে চাপা পড়ে এবং জমতে থাকে। গাছের পাতা ও কাণ্ড রাসায়নিক পরিবর্তনের ফলে কয়লায় রূপান্তরিত হয়। কয়লা পুড়িয়ে সরাসরি তাপ পাওয়া যায়। এটি একটি অতি পরিচিত জ্বালানি। তবে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার ছাড়াও কয়লা থেকে বহু প্রয়োজনীয় পদার্থ উৎপাদিত হয়। এদের মধ্যে রয়েছে কোল গ্যাস, আলকাতরা, বেঞ্জিন, অ্যামোনিয়া, টলুয়িন প্রভৃতি। রান্না করতে ও বাষ্পীয় ইঞ্জিন চালাতে কয়লা ব্যবহৃত হয়। আধুনিক কালে কয়লার প্রধান ব্যবহার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান উপাদান কয়লা।
কয়লা চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের প্রধান সমস্যা হচ্ছে এটি সালফারের ধোঁয়া নির্গমণ করে। এই ধোঁয়া এসিড বৃষ্টির সৃষ্টি করে। এই এসিড যদিও খুব দুর্বল, কিন্তু তা পুকুর, হ্রদ ও খালে বিলে মাছ মেরে ফেলে, বন ধ্বংস করে এবং প্রাচীন পাথুরে খোদাই করা কাজ নষ্ট করে ফেলে।
খনিজ তেল: শক্তির অন্যতম প্রধান উৎস খনিজ তেল বা পেট্রোলিয়াম। বর্তমান সভ্যতায় পেট্রোলিয়ামের ব্যবহার অত্যন্ত ব্যাপক। গ্রামের কুঁড়েঘর থেকে শুরু করে আধুনিকতম পরিবহন ব্যবস্থা সর্বত্রই এর ব্যবহার রয়েছে। পেট্রোলিয়াম থেকে নিষ্কাশিত তেল পেট্রোল, পাকা রাস্তার উপর দেওয়া পিচ, কেরোসিন ও চাষাবাদের জন্য ব্যবহৃত রাসায়নিক সার পাওয়া যায়। পরিবহনের জ্বালানি হিসেবে পেট্রোলের জুড়ি নেই। পেট্রোলিয়াম থেকে আরো পাওয়া যায় নানান রকম কৃত্রিম বস্ত্র। এগুলো হলো টেরিলিন, পলিয়েস্টার, ক্যাশমিলন ইত্যাদি। এছাড়া পেট্রোলিয়াম থেকে তৈরি হয় নানা রকম প্রসাধনী। এতসব ব্যবহার থাকা সত্ত্বেও এর মূল ব্যবহার জ্বালানি হিসিবে। পেট্রোলিয়ামজাত সামগ্রীর প্রধান ব্যবহার হলো তড়িৎ ও যান্ত্রিক শক্তি উৎপাদন। পেট্রোলিয়াম একটি ল্যাটিন শব্দ। এটি তৈরি হয়েছে পেট্রো ও অলিয়াম মিলে। ল্যাটিন ভাষায় পেট্রো শব্দের অর্থ পাথর এবং অলিয়াম শব্দের অর্থ তেল। সুতরাং, পেট্রোলিয়াম হলো পাথরের তেল অর্থাৎ পাথরের মধ্যে সঞ্চিত তেল। টারশিয়ারি যুগে অর্থাৎ আজ থেকে পাঁচ-ছয় কোটি বছর আগে সমুদ্রের তলদেশে পাললিক শিলার স্তরে স্তরে গাছপালা ও সামুদ্রিক প্রাণী চাপা পড়ে যায়। বিভিন্ন রাসায়নিক পরিবর্তনের ফলে এরা রূপান্তরিত হয় খনিজ তেলে। আজকের স্থলভাগের অনেকাংশ প্রাগৈতিহাসিক যুগে সমুদ্রের তলদেশে ছিল।
প্রাকৃতিক গ্যাস: প্রাকৃতিক গ্যাস শক্তির একটি পরিচিত উৎস। বিশেষ করে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার ব্যাপক। উন্নত দেশগুলোতেও প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার খুব বেশি। বিভিন্ন শিল্প কারখানায় এর ব্যবহার রয়েছে। এর ব্যবহার প্রধানত জ্বালানি হিসেবে। বাংলাদেশে রান্নার কাজে এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। এছাড়াও ব্যবহার রয়েছে অনেক সার কারখানায়। গ্যাসের সাহায্যে তাপশক্তি উৎপাদিত হয় এবং তা থেকে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদিত হয় বিদ্যুৎ।
প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া যায় ভূগর্ভ থেকে। সুগভীর কূপ খনন করে ভূগর্ভ থেকে এ গ্যাস উত্তোলন করা হয়। পৃথিবীর অভ্যন্তরে প্রচণ্ড তাপ ও চাপ এ ধরণের গ্যাস সৃষ্টির মূল কারণ। পেট্রোলিয়াম কূপ থেকেও প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া যায়। প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান উপাদান মিথেন গ্যাস। এই সকল শক্তিকে জীবাশ্ম শক্তিও বলা হয়।
উপরে শক্তির যে তিনটি উৎস সম্পর্কে আলোচনা করা হলো মানুষের শক্তির চাহিদা বৃদ্ধির ফলে এগুলো খুব দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। পৃথিবীর বর্তমান ভৌত অবস্থা যা তাতে করে এ সকল উৎস যেমন কয়লা, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস আর নতুন করে সৃষ্টি হওয়ার নয় এদেরকে অনবায়নযোগ্য শক্তি বলা হয়। ফলে শক্তির বিকল্প উৎসের দিকে ঝুঁকছে মানুষ। এ সকল শক্তির বিপরীতে বিকল্প যে সকল উৎস ব্যবহারের দিকে মানুষ আকৃষ্ট হচ্ছে তার মধ্যে সৌরশক্তি, পানি প্রবাহ থেকে প্রাপ্ত শক্তি, জোয়ার-ভাটা শক্তি, ভূ-তাপীয় শক্তি, বায়ু শক্তি, বায়োমাস ইত্যাদি উৎসগুলো প্রধান। এ উৎসগুলো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সূর্যের উপর নির্ভরশীল। যতদিন পৃথিবী সূর্যের আলো পেতে থাকবে ততদিন পর্যন্তএ সকল উৎস থেকে শক্তির সরবরাহ পাওয়া সম্ভব হবে। তাই এই সকল উৎসকে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস বলা হয়।

সৌরশক্তি: সূর্য থেকে যে শক্তি পাওয়া যায় তাকে বলে সৌরশক্তি। আমরা জানি সূর্য সকল শক্তির উৎস। পৃথিবীতে যত শক্তি আছে তার প্রায় সবই কোনো না কোনোভাবে সূর্য থেকে আসা বা সূর্য কিরণ ব্যবহৃত হয়েই তৈরি হয়েছে। যেমন আধুনিক সভ্যতার ধারক জীবাশ্ম জ্বালানি (কয়লা, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস) আসলে বহু দিনের সঞ্চিত সৌরশক্তি।
প্রাচীনকাল থেকে মানুষ সূর্য কিরণকে সরাসরি ব্যবহার করছে কোনো কিছু শুকানোর কাজে। বর্তমানে সূর্যের শক্তিকে সবসময় ব্যবহারের জন্য মানুষ নানান রকম উপায় অবলম্বন করছে। লেন্স বা দর্পণের সাহায্যে সূর্য রশ্মিকে অভিসারী করে আগুন জ্বালানো যায়। সূর্য কিরণকে ধাতব প্রতিফলকের সাহায্যে প্রতিফলিত করে তৈরি হয় সৌরচুল্লি। এ চুল্লিতে রান্না করা যায়।
করে দেখ: 15cm বা 20cm ফোকাস দূরত্বের একটি অবতল দর্পণ নাও। দর্পণটিকে সূর্যের দিকে মুখ করে ধর। কাগজের টুকরাটি হাতে নিয়ে দর্পণের সাহায্যে কাগজের উপর সূর্যালোক কেন্দ্রীভূত কর। এভাবে কাগজের টুকরাটিতে আগুন না জ্বলা পর্যন্ত ধরে থাক।
সৌরশক্তিকে শীতের দেশে ঘরবাড়ি গরম করার কাজে ব্যবহার করা হয়। শস্য, মাছ, সবজি শুকানোর কাজে সৌরশক্তি ব্যবহৃত হয়। মাছ শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করে তা বহুদিন সংরক্ষণ করা যায়। সৌরশক্তির আরো উদাহরণ হচ্ছে- সোলার ওয়াটার হিটার, সোলার কুকার ইত্যাদি।
আধুনিক কৌশল ব্যবহার করে তৈরি হয়েছে সৌরকোষ। সৌরকোষের বৈশিষ্ট্য হলো এর উপর সূর্যের আলো পড়লে এ থেকে সরাসরি তড়িৎ পাওয়া যায়। সৌরকোষের নানা রকম ব্যবহার রয়েছে।
১। কৃত্রিম উপগ্রহে তড়িৎ শক্তি সরবরাহের জন্য এ কোষ ব্যবহৃত হয়। এ জন্য কৃত্রিম উপগ্রহ বহুদিন ধরে তার কক্ষপথে ঘুরতে পারে।
২। বিভিন্ন ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি যেমন পকেট ক্যালকুলেটর, পকেট রেডিও, ইলেকট্রনিক ঘড়ি সৌরশক্তির সাহায্যে চালানো হচ্ছে।
৩। বর্তমানে আমাদের দেশেও সৌরশক্তির সাহায্যে অনেক গ্রামে, বাসা-বাড়ি বা অফিসে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করে বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো হচ্ছে।
সৌরশক্তি ব্যবহারের সুবিধা হলো এ শক্তি ব্যবহারে পরিবেশ দূষণের সম্ভাবনা কম। এ শক্তি ব্যবহারে বিপদের আশঙ্কা নেই বললেই চলে। সৌরশক্তির সহসা নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এ শক্তির তাই প্রচলিত শক্তি উৎস জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প হিসেবে ব্যবহারের সম্ভাবনা খুব বেশি।
জলবিদ্যুৎ (যান্ত্রিক শক্তির রূপান্তর)
পানি নবায়নযোগ্য শক্তির অন্যতম উৎস। পানির স্রোত ও জোয়ারÑভাটাকে ব্যবহার করে শক্তি উৎপাদন করা যায়। প্রবাহিত পানির স্রোতে বিভিন্ন ধরনের শক্তি আছে যেমন গতিশক্তি ও বিভব শক্তি। পানির প্রবাহ বা স্রোতকে কাজে লাগিয়ে যে তড়িৎ বা বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় তাকে বলা হয় জলবিদ্যু। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের জলবিদুৎ প্রকল্পে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বিভব শক্তি ব্যবহার করা হয়। প্রবাহিত পানির স্রোতকে ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রক্রিয়াটি সহজ। পানির স্রোতের সাহায্যে একটি টার্বাইন ঘোরানো হয়। এই টার্বাইনের ঘূর্ণন থেকেই এখানে যান্ত্রিক শক্তি ও চৌম্বকশক্তির সমন্বয় ঘটানো হয়।
প্রবাহিত পানির স্রোত থেকে যান্ত্রিক শক্তি সংগ্রহ করে চৌম্বক শক্তির সমন্বয়ে তড়িৎ উৎপাদন করা হয় বলে এ
Tarbain.jpg
মডেল তৈরি: পড়ন্ত পানির শক্তিকে কাজে লাগিয়ে টার্বাইন ঘুরিয়ে একটি ডায়নামো চালিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের একটি মডেল তৈরি কর। চিত্র : (৪.৬)।
ধরণের তড়িতের নাম জলবিদ্যুৎ। আমাদের দেশে কাপ্তাই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে পানির বিভব শক্তিকে ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
নদী বা সমুদ্রের পানির জোয়ার-ভাটার শক্তিকে ব্যবহারের প্রচেষ্টা মানুষ বহুদিন থেকে চালিয়ে যাচ্ছে। জোয়ার-ভাটার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন যন্ত্র চালনার ব্যাপারটি অনেকদিন আগেই উদ্ভাবিত হয়েছে।
ফ্রান্সে জোয়ার-ভাটার শক্তির সাহায্যে তড়িৎ শক্তি প্রকল্প সফলতার সাথে কাজ করছে। বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জোয়ার-ভাটার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে তড়িৎ উৎপাদনের চেষ্টা চলছে।
বায়ু শক্তি: পৃথিবী পৃষ্ঠের তাপমাত্রার পার্থক্যের কারণে বায়ু প্রবাহিত হয়। বায়ু প্রবাহজনিত গতিশক্তিকে আমরা যান্ত্রিক বা তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারি। শক্তি রূপান্তরের এরূপ যন্ত্রকে বায়ুকল বলে। বায়ু প্রবাহকে কাজে লাগিয়ে প্রাচীনকালের মানুষেরা কুয়া থেকে পানি তোলা, জাহাজ চালানো ইত্যাদি কাজ সম্পাদন করতো। নৌকায় পাল তুলে আজও বায়ু শক্তিকে কাজে লাগানো হয়। বর্তমানে প্রযুক্তি ব্যবহার করে বায়ুকল কাজে লাগিয়ে তড়িৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
ভূ-তাপীয় শক্তি: ভূ-অভ্যন্তরের তাপকে শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। ভূ-অভ্যন্তরের গভীরে তাপের পরিমাণ এত বেশি যে তা শীলাখণ্ডকে গলিয়ে ফেলতে পারে। এ গলিত শীলাকে ম্যাগমা বলে। ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তনের ফলে কখনো কখনো এই ম্যাগমা উপরের দিকে উঠে আসে যা ভূপৃষ্ঠের খানিক নিচে জমা হয়। এ সকল জায়গা হট স্পট (Hot spot) নামে পরিচিত। ভূ-গর্ভস্থ পানি এ হট স্পটের সংস্পর্শে এসে বাষ্পে পরিণত হয়। এই বাষ্প ভূÑগর্ভে আটকা পড়ে যায়। হট স্পটের উপর গর্ত করে পাইপ ঢুকিয়ে উচ্চ চাপে এই বাষ্পকে বের করে আনা যায় যা দিয়ে টার্বাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। নিউজিল্যান্ডে এ রকম বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র আছে।
বায়োমাস শক্তি: সৌর শক্তির একটি ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ যা সবুজ গাছপালা দ্বারা সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে বায়োমাসরূপে গাছপালার বিভিন্ন অংশে মজুদ থাকে। বায়োমাস বলতে সেই সব জৈব পদার্থকে বুঝায় যাদেরকে শক্তিতে রূপান্তরিত করা যায়। মানুষসহ অনেক প্রাণী খাদ্য হিসেবে বায়োমাস গ্রহণ করে তাকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে জীবনের কর্মকাণ্ড সচল রাখে। বায়োমাসকে শক্তির একটি বহুমুখী উৎস হিসেবে বিবেচনা করা যায়। জৈব পদার্থসমূহ যাদেরকে বায়োমাস শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহার করা যায় সেগুলো হচ্ছে গাছ-গাছালী, জ্বালানি কাঠ, কাঠের বর্জ্য, শস্য, ধানের তুষ ও কুড়া, লতা-পাতা, পশু পাখির মল, পৌর বর্জ্য ইত্যাদি। বায়োমাস প্রধানত কার্বন ও হাইড্রোজেন দ্বারা গঠিত। নবায়নযোগ্য শক্তির অন্যতম উৎস বায়োমাস।
বায়োমাস থেকে সহজে উৎপাদন করা যায় বায়োগ্যাস। এ গ্যাস আমরা প্রাকৃতিক গ্যাসের বিকল্প হিসেবে রান্নার কাজে এমনকি বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজেও ব্যবহার করতে পারি। এর উৎপাদন পদ্ধতিও বেশ সহজ। একটি আবদ্ধপাত্রের মধ্যে গোবর ও পানির মিশ্রণ ১ঃ২ অনুপাতে রেখে পচানো হলে বায়োগ্যাস উৎপন্ন হয়। যা নলের সাহায্যে বেরিয়ে আসে। এ গ্যাস রান্নার কাজে ব্যবহার করা যায়। ৪/৫ জনের একটি পরিবারের রান্না ও বাতি জ্বালানোর গ্যাসের জন্য ২/৩ টি গরুর গোবরই যথেষ্ট।
নিউক্লীয় শক্তি: নিউক্লীয় বিক্রিয়ায় উৎপন্ন শক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। যে নিউক্লীয় বিক্রিয়ায় প্রাপ্ত শক্তিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা হয় সেই বিক্রিয়াকে বলা হয় নিউক্লীয় ফিশন। এতে ইউরেনিয়ামের সাথে নির্দিষ্ট শক্তির নিউট্রনের বিক্রিয়া ঘটনো হয়। নিউক্লীয় চুল্লিতে এই বিক্রিয়া ঘটনো হয়।
নিউক্লীয় বিক্রিয়ায় সাধারণত পদার্থ তথা ভর শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। অবশ্য নিউক্লীয় বিক্রিয়ায় মোট ভরের কেবল একটি ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। পদার্থ শক্তিতে রূপান্তরিত হলে যদি ঊপরিমাণ শক্তি পাওয়া যায়, তাহলে
E= mc²
এখানে m হচ্ছে শক্তিতে রূপান্তরিত ভর এবং
c হচ্ছে আলোর বেগ যা 3× এর সমান।
পরীক্ষা করে দেখা গেছে একটি ফিশন বিক্রিয়ায় অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট শক্তির নিউট্রন যদি একটি ইউরেনিয়াম নিউক্লীয়াসকে আঘাত করে তাহলে প্রায়
 শক্তি নির্গত হয়। যেহেতু ফিশন বিক্রিয়া একটি শৃঙ্খল বিক্রিয়া, মুহূর্তের মধ্যে কোটি কোটি বিক্রয়া সংঘটিত হয় এবং বিপুল পরিমাণ শক্তি নির্গত হয়।
হিসাব কর: 1kg বস্তুকে যদি সম্পূর্ণরূপে শক্তিতে রূপান্তরিত করা সম্ভব হতো, তাহলে কত কিলোওয়াট ঘন্টা
শক্তি উৎপন্ন হতো? 1 কিলোওয়াট ঘন্টা (1kWh) =
এই বিক্রিয়ায় প্রাপ্ত শক্তিকে নিয়ন্ত্রিত উপায়ে উচ্চ চাপের কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের অভ্যন্তরীণ শক্তি হিসেবে নিরবচ্ছিন্নভাবে পাম্প করে অন্য পাত্রে নেওয়া হয়। এই উত্তপ্ত গ্যাস একটি বিশেষ বাষ্প বয়লারের চারপার্শ্বে ঘুরে বয়লারের ভিতরের বাষ্পকে উত্তপ্ত করে যা টার্বাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। নিউক্লীয় বিক্রিয়ায় এক টন ইউরেনিয়াম থেকে যে শক্তি পাওয়া যায় তা দশ লক্ষ টন কয়লা পুড়িয়ে পাওয়া শক্তির সমান।
কিন্তু নিউক্লীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের অনেক অসুবিধা আছে। নিউক্লীয় জ্বালানির বর্জ্য অতিমাত্রায় তেজস্ক্রিয় এবং এই বর্জ্যকে নিরাপদে পরিণত করতে হাজার হাজার বছর ধরে সংরক্ষণ করতে হয়। এছাড়া নিউক্লীয় চুল্লিতে উচ্চ তাপমাত্রা ও চাপ তৈরি হয়। তাই একে এমন পদার্থ দিয়ে তৈরি করতে হবে যেন তা সহ্য করতে পারে। কোনো দূর্ঘটনা যে কত মারাত্মক তা আমরা সোভিয়েত ইউনিয়নের (বর্তমানে ইউক্রেনের) চেরনোবিল এবং জাপানের ফুকুশিমা এর অভিজ্ঞতা থেকে জানি। তবে নিউক্লীয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে পরিবেশে গ্রিন হাউস গ্যাস কম উৎপন্ন হয়।
নবায়নযোগ্য শক্তির সামাজিক প্রভাব ও সুবিধা: আমাদের সামাজিক জীবনে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের সুদূর প্রসারী প্রভাব রয়েছে। আমাদের দেশে চাহিদার তুলনায় প্রাকৃতিক শক্তি যেমন কয়লা, খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ অতি নগণ্য। তাই আমাদের শক্তির প্রয়োজন মেটাতে অমূল্য বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে বিদেশ থেকে খনিজ তেল, কয়লা আমদানি করতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে যে সকল নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস রয়েছে সেগুলো বিশেষ করে বায়োগ্যাস উৎপাদন ও ব্যবহারে পল্লী অঞ্চলের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে সহজেই আমাদের পল্লী অঞ্চলের চেহারা বদলে দেওয়া সম্ভব হবে।
বায়ুকল ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকেও আমরা নজর দিতে পারি। গবেষণার মাধ্যমে সৌরশক্তির ব্যবহার সুলভ করতে পারলে আমাদের শক্তির যাবতীয় প্রয়োজন অফুরন্তএ উৎস থেকে মেটানো সম্ভব হবে।
নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের প্রধান সুবিধাই হচ্ছেÑএ উৎস শেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা নেই। তাছাড়া পরিবেশ দূষণের হাত থেকে দেশকে বাচানো সম্ভব হবে।
৪.৪ শক্তির রূপান্তর
Transformation of energy[edit]
শক্তি অহরহ একরূপ থেকে অন্যরূপেরূপান্তরিত হচ্ছে। এ মহাবিশ্বে নানা ঘটনা প্রবাহ চলছে শক্তির রূপান্তর আছে বলে। শক্তি একরূপ থেকে একাধিকরূপেরূপান্তরিত হলেও মহাবিশ্বের মোট শক্তি ভাণ্ডারে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না।
মানুষ, কম্পিউটার কিংবা কোনো যন্ত্রকে কোনো কাজ করতে হলে কিংবা কোনো প্রক্রিয়া বা পরিবর্তন সাধন করতে হলে শক্তির রূপান্তরের প্রয়োজন হয়। একরূপের শক্তিকে অন্য রূপের শক্তি উৎপাদনে ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, একরূপের শক্তি সারাক্ষণই অন্যান্যরূপের শক্তিতে পরিবর্তিত হচ্ছে। এটিই শক্তির রূপান্তর হিসেবে পরিচিত। যখন কেউ গিটার বাজায় তখন কী হয়? শিল্পীর হাতের আঙুলের পেশি শক্তি কম্পমান তারে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে যা সুমধুর মিউজিকরূপে শব্দ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে আমাদের কানে প্রবেশ করে। যখন কাঠ বা খড়ি পোড়ানো হয়, তখন রাসায়নিক শক্তি মুক্ত হয় এবং তা তাপ ও আলোক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। একটি তড়িৎ কোষের অভ্যন্তরে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে এবং এই সকল বিক্রিয়ার রাসায়নিক শক্তি তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয় যা নানাবিধ কাজে ব্যবহৃত হয়।
একরূপের নির্দিষ্ট পরিমাণ শক্তি অন্যরূপে রূপান্তরিত করলে কতটুকু শক্তি পাওয়া যাবে? শক্তির নিত্যতা বা সংরক্ষণশীলতা নীতি থেকে তা জানা যায়। শক্তি যখন একরূপ থেকে অন্যরূপে পরিবর্তিত হয় তখন শক্তির কোনো ক্ষয় হয় না। এক বস্তু যে পরিমাণ শক্তি হারায় অপর বস্তু ঠিক সেই পরিমাণ শক্তি লাভ করে। প্রকৃতপক্ষে আমরা নতুন কোনো শক্তি সৃষ্টি করতে পারি না বা শক্তি ধ্বংসও করতে পারি না। অর্থাৎ বিশ্বের সামগ্রিক শক্তি ভাণ্ডারের কোনো তারতম্য ঘটে না। এ বিশ্ব সৃষ্টির প্রথম মুহূর্তে যে পরিমাণ শক্তি ছিল আজও মহাবিশ্বে সেই পরিমাণ শক্তি বর্তমান। এটাই শক্তির অবিনশ্বরতা বা নিত্যতা বা সংরক্ষণশীলতা।
শক্তির সংরক্ষণশীলতা নীতি: শক্তির সৃষ্টি বা বিনাশ নেই, শক্তি কেবল একরূপ থেকে অপর এক বা একাধিকরূপে পরিবর্তিত হতে পারে। মহাবিশ্বের মোট শক্তির পরিমাণ নির্দিষ্ট ও অপরিবর্তনীয়।
শক্তিররূপান্তর: আমরা আগেই বিভিন্ন প্রকার শক্তির কথা বলেছি সেগুলো সকলেই পরস্পরের সাথে সম্পর্কিত। অর্থাৎ কোনো একটা থেকে অন্যটাতে পরিবর্তন সম্ভব। এ পরিবর্তনকে শক্তির রূপান্তর বলে। আসলে প্রায় প্রত্যেক প্রাকৃতিক ঘটনাকেই শক্তির রূপান্তর হিসেবে ধরা যেতে পারে। নিচে শক্তির রূপান্তরের কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো:
১।যান্ত্রিক শক্তির রূপান্তর: হাতে হাত ঘষলে তাপ উৎপন্ন হয়। এক্ষেত্রে যান্ত্রিক শক্তি তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। কলমের খালি মুখে ফুঁ দিলে যান্ত্রিক শক্তি শব্দ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। পানি যখন পাহাড় পর্বতের উপরে থাকে তখন তাতে বিভব শক্তি সঞ্চিত থাকে। এই পানি যখন ঝরনা বা নদীরূপে উপর থেকে নিচে নেমে আসে তখন বিভব শক্তি গতিশক্তিতে পরিণত হয়। এই পানি প্রবাহের সাহায্যে চাকা ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। এভাবে যান্ত্রিক শক্তি তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
২। তাপ শক্তির রূপান্তর: বাষ্পীয় ইঞ্জিনে তাপের সাহায্যে বাষ্প উৎপন্ন করে রেলগাড়ি ইত্যাদি চালানো হয়। এখানে তাপ শক্তি যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। বাল্বের ফিলামেন্টের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহের ফলে তাপ শক্তি আলোক শক্তিতেরূপান্তরিত হয়। দুটি ভিন্ন ধাতব পদার্থের সংযোগস্থলে তাপ প্রয়োগ করলে তাপ তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
৩। আলোক শক্তির রূপান্তর: হারিকেনের চিমনিতে হাত দিলে গরম অনুভূত হয়। এখানে আলোক শক্তি তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। ফটো-ভোলটাইক কোষের উপর আলোর ক্রিয়ায় আলোক শক্তি তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। ফটোগ্রাফিক কাগজের উপর আলোর ক্রিয়ায় ফলে আলোক শক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
৪। রাসায়নিক শক্তির রূপান্তর: খাদ্য এবং জ্বালানি যেমন তেল, গ্যাস, কয়লা ও কাঠ হচ্ছে রাসায়নিক শক্তির আধার। রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে খাদ্যের শক্তি আমাদের দেহে মুক্ত হয় এবং অন্য শক্তিতে রূপান্তরিত হওয়ার সময় আমরা দরকারী কাজ করতে পারি। ইঞ্জিনে বা বয়লারে যখন জ্বালানি পোড়ানো হয় তখন শক্তির রূপান্তর ঘটায়। তড়িৎ কোষ ও ব্যাটারিতে রাসায়নিক শক্তি তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। তড়িৎ শক্তি আবার বাতির ফিলামেন্টে আলোক শক্তি ও তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
৫। তড়িৎ শক্তির রূপান্তর: বৈদ্যুতিক মোটরে তড়িৎ শক্তি যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। বৈদ্যুতিক ইস্ত্রি, হিটার ইত্যাদিতে তড়িৎ শক্তি তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। বৈদ্যুতিক বাল্বে তড়িৎ শক্তি আলোক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। টেলিফোন ও রেডিওর গ্রাহক যন্ত্রে তড়িৎ শক্তি শব্দ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। সঞ্চয়ক কোষে তড়িৎ শক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। তাড়িত চুম্বকে তড়িৎ শক্তি চৌম্বক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
৬। নিশক্তিউক্লীয় শক্তির রূপান্তর :নিউক্লীয় সাবমেরিনে নিউক্লীয় শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত করা হয়। নিউক্লীয় বোমার ধ্বংস লীলা নিউক্লীয় শক্তির রূপান্তর ভিন্ন আর কিছুই নয়। নিউক্লীয় চুল্লীতে নিউক্লীয় শক্তি অন্যান্য শক্তি বিশেষ করে তড়িৎ শক্তিতে রুপান্তরিত হয়ে আজকাল শক্তির চাহিদা অনেকাংশেই পূরণ করে থাকে।
বৈদ্যুতিক পাওয়ার স্টেশন থেকে বুঝা যায় কীভাবে একরূপ থেকে অন্যরূপেরূপান্তর হয়ে আমরা বাড়ি ঘরে আলো ও তাপ শক্তি পাই। পাওয়ার স্টেশনে কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাস পুড়িয়ে রাসায়নিক শক্তি থেকে তাপ শক্তি পাওয়া যায়। টার্বাইনের সাহায্যে তাপ শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত করা হয় যা বৈদ্যুতিক জেনারেটরের কুণ্ডলীকে ঘুরায়। এতে তড়িৎ শক্তি উৎপন্ন হয়। বাড়ি ঘরে, কল কারখানায় বৈদ্যুতিক বাতি ও হিটার তড়িৎ শক্তিকে আলো ও তাপ শক্তিতেরূপান্তরিত করে।
আবার আমরা যখন হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে কোনো পেরেককে কাঠের মধ্যে প্রবেশ করাই তখন কোন কোন শক্তি কোন কোন শক্তিতে রূপান্তরিত হয়? আমাদের শরীরের রাসায়নিক শক্তি হাতুড়িকে উপরে উঠাতে কৃত কাজে ব্যয় হয় যা হাতুড়ির উচ্চ অবস্থানে বিভব শক্তিরূপে জমা থাকে। যখন হাতুড়ি নিচে নামে তখন এই বিভব শক্তি গতিশীল হাতুড়ির গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এই গতিশক্তি পেরেকটিকে কাঠের মধ্যে প্রবেশ করাতে প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহৃত হয় এবং সাথে সাথে শব্দ শক্তি উৎপন্ন হয় এবং পেরেক, কাঠ ও হাতুড়িতে তাপ শক্তি উৎপন্ন হয়।
শক্তিরূপান্তরিত হওয়ার সময় শক্তি সৃষ্টি বা ধ্বংস না হলেও শক্তির অবনতি ঘটতে পারে। যেমন আলো বা তড়িৎ শক্তির মতো তাপ শক্তির সবটাই আমরা কাজে লাগাতে পারি না।
৪.৫ ক্ষমতা
Power[edit]

ক্ষমতা শব্দটির সাথে আমরা সবাই পরিচিত। দৈনন্দিন জীবনে ক্ষমতা সাধারণত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের সাথে সম্পর্কিত। বিজ্ঞানে ক্ষমতা শব্দটি মোটর, পাম্প, ইঞ্জিন ইত্যাদি যন্ত্র তথা কাজ সম্পাদনকারী কোনো কিছুর সাথে সংশ্লিষ্ট। অনেক সময় আমরা কোনো কাজ দ্রুত সমাধা করতে চাই। ধরা যাক, আমরা কোনো বহুতল ভবনের নিচতলার রিজার্ভার বা পুকুর থেকে পানি নিয়ে ছাদের ট্যাংক পানি পূর্ণ করতে চাই। আমরা যদি বালতি দিয়ে পানি বহন করে এ কাজটি করতে যাই তাহলে অনেক সময় লাগবে। আর যদি একটি মোটর বা পাম্পের সাহায্যে সরাসরি ট্যাংকটি পানি পূর্ণ করা হয়, তাহলে সময় অনেক কম লাগবে।
কোনো কাজ কখনও দ্রুত করা হয় কখনও ধীরে করা হয়। কত দ্রুত বা কত ধীরে কাজ করা হয় তার পরিমাপ হলো ক্ষমতা। মনে কর রনি ও অনি দুই বন্ধু একটি ভবনের পাঁচতলায় বাস করে। তাদের দুজনের ভর সমান। তারা নিচতলায় লিফটের দরজার সামনে এসে দেখল লিফট নষ্ট। তাদের সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে হলো। রনির পাঁচ তলায় উঠতে সময় লাগল ৪০সেকেন্ড আর অনির লাগল ৮০সেকেন্ড। আমরা বলি রনি অনির চেয়ে বেশি ক্ষমতাবান যদিও তারা দুজনেই একই উচ্চতা উঠার জন্য একই পরিমাণ কাজ করেছে। রনির ক্ষমতা বেশি কারণ সে একই কাজ দ্রুত করেছে। ক্ষমতা হচ্ছে কাজ করার বা শক্তি রূপান্তরের হার। কোনো বস্তু বা ব্যক্তি একক সময়ে কতটুকু কাজ করল তা দ্বারা ক্ষমতা পরিমাপ করা হয়।
ক্ষমতা =
কাজ
সময়

কোনো ব্যক্তি বা যন্ত্র দ্বারা t সময়ে W পরিমাণ কাজ সম্পন্ন হলে বা শক্তি রূপান্তরিত হলে ক্ষমতা P হবে P=  ...............(4.4)
ক্ষমতার দিক নেই। কাজেই ক্ষমতা একটি স্কেলার রাশি।
মাত্রা: ক্ষমতার মাত্রা
কাজ
সময়
 -এর মাত্রা।
ক্ষমতা =
কাজ
সময়
=
বল×সরণ
সময়
 =
ভর×ত্বরণ×সরণ
সময়

=
ভর×সরণ×সরণ
সময়²×সময়
=
ভর×সরণ³
সময়³

[P]= =
একক: কাজের একককে সময়ের একক দিয়ে ভাগ করে ক্ষমতার একক পাওয়া যায়। যেহেতু কাজের একক জুল (J) এবং সময়ের একক হলো সেকেন্ড (s), সুতরাং ক্ষমতার একক হবে জুল/সেকেন্ড (Joule / second)। একে ওয়াট বলা হয়। ওয়াটকে W দিয়ে প্রকাশ করা হয়।
এক সেকেন্ডে এক জুল কাজ করা বা শক্তি রূপান্তরের হারকে এক ওয়াট বলে।
1W= =
ওয়াট খুব ছোট একক হওয়ায় অনেক সময় এর চেয়ে হাজারগুণ বড় একক কিলোওয়াট ব্যবহার করা হয়।
1 কিলোওয়াট = 1000 ওয়াট তুমি হয়তো কখনও অশ্ব ক্ষমতার কথা শুনে থাকতে পার। আগে ক্ষমতার এই এককটি ব্যবহার করা হতো। এখনও অনেক সময় গাড়ি বা মোটরের ক্ষমতা বুঝানোর জন্য এটি ব্যবহার করা হয়।
1 অশ্ব ক্ষমতা = 746 ওয়াট।
তুমি কি কিলোওয়াট ঘণ্টার কথা শুনেছো? এটি কী বুঝায়? আসলে এটি কাজ বা শক্তির একটি একক। আমরা বাড়ি ঘর কলকারখানা ইত্যাদিতে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ শক্তির বিদ্যুৎ বিল এই এককে পরিশোধ করে থাকি। এক কিলোওয়াট ঘন্টা বলতে বুঝায় এক কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কোনো যন্ত্র এক ঘণ্টা ধরে কাজ করলে যে শক্তি ব্যয় হয় তা। কোনো বাতির গায়ে 60 ওয়াট লেখা থাকার অর্থ এ বাতিটি প্রতি সেকেন্ডে 60 জুল তড়িৎ শক্তিকে আলো ও তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত করে। কোনো বৈদ্যুতিক পাওয়ার স্টেশনের ক্ষমতা 200 মেগাওয়াট বলতে বুঝায় ঐ পাওয়ার স্টেশনটি প্রতি সেকেন্ডে 200000000 জুল তড়িৎ শক্তি সরবরাহ করছে। এ তড়িৎ শক্তি আমরা বাড়ি ঘর, কল কারখানা ও অফিস আদালতে ব্যবহার করছি।
গাণিতিক উদাহরণ ৪.৪: 70 kg ভরের এক ব্যক্তি প্রতিটি 25 cm উঁচু 30 টি সিঁড়ি 15 s-এ উঠতে পারেন। তার ক্ষমতা কত? ()
আমরা জানি,
P=
কাজ
সময়
=
=
= 343 W
উত্তর: 343 W  এখানে,
ব্যাক্তির ভর, m= 70 kg
বল, F= ব্যাক্তির ওজন= mg
=
= 686 N
সরণ, s= 30× 25cm= 750cm
= 7.5m
সময়, t= 15s
ক্ষমতা, P= ?
করে দেখ: তোমার স্কুলের বা বাসার বা কোনো দালানের ছাদে ওঠার সিঁড়ির সংখ্যা গণনা কর। প্রতিটি সিঁড়ির উচ্চতা স্কেলের সাহায্যে নির্ণয় কর। এর থেকে ছাদের উচ্চতা কত মিটার নির্ণয় কর। ওয়েট মেশিনের সাহায্যে তোমার ভর কত কিলোগ্রাম তা নির্নয় কর। তোমার ভরকে ৯.৮দিয়ে গুণ করলে তোমার ওজন কত নিউটন তা পাবে। এর পর তুমি দৌড়ে ছাদের উপর ওঠ। স্টপ ওয়াচের সাহায্যে ছাদে ওঠার মোট সময় নির্ণয় কর।
তোমার কৃত কাজ হবে তোমার ওজন × মোট উচ্চতা।
তোমার ক্ষমতা হবে তোমার মোট কৃত কাজ ÷ মোট সময় অর্থাৎ
কৃত কাজ
মোট সময়
তোমার বন্ধুদের সাথে নিয়ে এই কর্মকাণ্ডটি পরিচালনা কর এবং তাদের সাথে তোমার ক্ষমতা তুলনা কর।
তোমার ক্লাশের সবচেয়ে ক্ষমতাবান শিক্ষার্থীটি কে?
৪.৬ কর্মদক্ষতা
Efficiency[edit]
শক্তি রূপান্তরের সহায়তায় আমরা দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজন মেটাই। যেমন পেট্রোলে সঞ্চিত রাসায়নিক শক্তি গতিশক্তিতে রূপান্তরের মাধ্যমে আমরা ইঞ্জিন চালাতে পারি। শক্তির সংরক্ষণশীলতা নীতি অনুসারে কোনো ইঞ্জিন থেকে সেই পরিমাণ শক্তি আমাদের পাওয়া উচিত যে পরিমাণ শক্তি ইঞ্জিনে প্রদত্ত হয়। কিন্তু এটা দেখা যায় যে পরিমাণ শক্তি ইঞ্জিনে প্রদত্ত হয় সর্বদাই তার চেয়ে কম পরিমাণ শক্তি লাভ করা যায়। এটি প্রধানত হয় এই কারণে যে ইঞ্জিনে ঘর্ষণ বলের বিরুদ্ধেযে কাজ করতে হয়, তা তাপ শক্তিরূপে অপচয় হয়। ইঞ্জিন থেকে যে পরিমাণ শক্তি পাওয়া যায় তাকে লভ্য কার্যকর শক্তি বলে। এক্ষেত্রে শক্তির সমীকরণ দাঁড়ায়:
প্রদত্ত শক্তি = লভ্য কার্যকর শক্তি + অন্যভাবে ব্যয়িত শক্তি।
কোনো যন্ত্রের কর্মদক্ষতা বলতে বুঝায়, যন্ত্রে যে পরিমাণ শক্তি প্রদান করা হয় তার কত অংশ কার্যকর শক্তি হিসেবে পাওয়া যায়। সুতরাং, কর্মদক্ষতা বলতে মোট যে কার্যকর শক্তি পাওয়া যায় এবং মোটযে শক্তি দেওয়া হয়েছে তার অনুপাতকে বুঝায়। একে সাধারণত শতকরা হিসেবে প্রকাশ করা হয়ে থাকে।
কর্মদক্ষতা, =
লভ্য কার্যকর শক্তি
মোট প্রদত্ত শক্তি
× 100% .................. (4.5)
একটি সাধারণ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে, অনেক ধাপে শক্তির রূপান্তর ঘটে। এই রূপান্তর কয়লা, তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস বা ইউরেনিয়াম থেকে শুরুকরে বিদ্যুৎ শক্তি পাওয়া পর্যন্তচলতে থাকে। দেখা গেছে শক্তির এই রূপান্তরসমূহের ক্ষেত্রে প্রদত্ত শক্তির প্রায় 70%পর্যন্তঅপচয় হয় এবং তাপ শক্তিরূপে হারিয়ে যায়।
প্রদত্ত শক্তির কেবল 30 % শেষ পর্যন্তব্যবহারযোগ্য তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। সুতরাং আমরা বলতে পারি যে উৎপাদন কেন্দ্রের কর্মদক্ষতা মাত্র 30 %।
গাণিতিক উদাহরণ ৪.৫: একটি 10 N ওজনের বস্তুকে 5 m উচ্চতায় উঠানোর জন্য একটি বৈদ্যুতিক মোটর ব্যবহার কর হলো। এটি 65 J তড়িৎ শক্তি ব্যবহার করে।
(ক) মোটর কর্তৃক অপচয়কৃত শক্তির পরিমাণ কত?
(খ) মোটরের কর্মদক্ষতা কত?
(ক) এখানে ব্যয়িত শক্তি = কৃত কাজ = বল × সরণ = ওজন × উচ্চতা
= 10N× 5m
= 50 J
সুতরাং অপচয়কৃত শক্তি = সরবরাহ কৃত শক্তি - ব্যয়িত শক্তি
= 65 J- 50 J
= 15 J
কর্মদক্ষতা, =
লভ্য কার্যকর শক্তি
মোট প্রদত্ত শক্তি
× 100% .................. (4.5)
= × 100%
= 76.92%
অনুসন্ধান ৪.১
সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে উঠে শিক্ষার্থীর ক্ষমতা নির্নয়।
উদ্দেশ্য: ক্ষমতা নির্ণয় এবং নিজের বিভিন্ন সময়ে প্রয়োগকৃত ক্ষমতার তুলনা এবং অপরের ক্ষমতার সাথে তুলনা।
যন্ত্রপাতি: থামা ঘড়ি।
কাজের ধারা:
১. একটি দালান ঠিক কর (তিনতলা থেকে ছয়তলার মধ্যে হলে ভালো হয়)। সেটি তোমার স্কুল, বাসা বা যে কোনো ভবন হতে পারে।
২. এই দালানের ছাদে উঠার সিঁড়ির সংখ্যা গণনা কর।
৩. একটি সিঁড়ির উচ্চতা স্কেলের সাহায্যে নির্ণয় করে তাকে সিঁড়ির সংখ্যা দিয়ে গুণ করে ছাদের মোট উচ্চতা নির্ণয় কর।
৪. একটি ওয়েট মেশিনের (ওজন মাপার যন্ত্র) সাহায্যে তোমার ভর নির্ণয় কর।
৫. তুমি যত জোরে পারো দৌড়ে ছাদের উপর ওঠ।
৬. থামা ঘড়ির সাহায্যে ছাদে ওঠার সময় নির্ণয় কর।
৭. এর পর তুমি আস্তে দৌড়ে, জোরে হেঁটে, স্বাভাবিকভাবে হেঁটে এবং আস্তে আস্তে হেঁটে একইভাবে ছাদে ওঠার সময় নির্ণয় কর।
৮. নিম্নোক্ত ছক অনুসারে প্রতিক্ষেত্রে তোমার ক্ষমতা বের কর।
অনুসন্ধানের ছক
তোমার ভর, m= kg
ছাদের উচ্চতা, h= m
অভিকর্ষজ ত্বরণ,
পাঠ     দৌড়ের প্রকৃতি  ছাদে উঠার সময়,
(s)     ক্ষমতা = (W)
1       জোরে দৌড়ে           
2       আস্তে দৌড়ে            
3       জোরে হেটে            
4       স্বাভাবিক ভাবে হেটে            
5       আস্তে হেটে             
৯. বিভিন্ন সময় তোমার ক্ষমতা বিভিন্ন হলো কেন, তা আলোচনা কর।
১০. একই ভাবে প্রাপ্ত তোমার বন্ধুদের ক্ষমতার সাথে তোমার ক্ষমতার তুলনা কর।
১১. তোমার ক্লাশের সবচেয়ে বেশি এবং সবচেয়ে ক্ষমতা প্রয়োগকারী পাঁচজন শিক্ষার্থীর নাম লিখ।
অনুসন্ধান - ৪.২
বায়োমাস থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদন।
উদ্দেশ্য: নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার প্রদর্শন।
যন্ত্রপাতি/উপকরণ: গোবর, চাউলের তুষ, কাঠের গুঁড়ো, প্লাস্টিক বা কাচের বড় বোতল (বা ল্যাবরেটরিতে থাকলে কনিক্যাল ফ্লাক্স), কর্ক, নল ইত্যাদি।
কাজের ধারা: ১. বোতলের মধ্যে গোবর, তুষ, কাঠের গুঁড়োর মিশ্রণ এবং পানি ১ঃ২ অনুপাতে নাও।
২. এবার নল লাগানো কর্ক দিয়ে বোতলের বা ফ্লাক্সের মুখ বন্ধ করে দাও।
৩. নলের মুখটিও কর্ক দিয়ে ভালো করে বন্ধ করে দাও।
৪. বোতল বা ফ্লাক্সটিকে ঘরের এক কোণে রেখে দাও।
৫. দু'এক দিন পর নলের মুখের কর্ক সরিয়ে দেখ গ্যাস বের হচ্ছে কি না।
৬. গ্যাস বের হলে নলের মুখে জ্বলন্ত দিয়াশলাইয়ের কাঠি ধর।

৭. গ্যাসে আগুন জ্বলবে
Powered by Blogger.