পড়াশুনা আগ্রহ বাড়ার কৌশল :
জেনে নাও কিভাবে পড়ায় আগ্রহ ও মনযোগ তৈরি করা যায় তার কিছু সহজতম কৌশল—
১) প্রথমেই তোমাকে জানতে হবে কেনো পড়ছো। যখন বুঝবে, এই পড়াটা ভালোভাবে করারমাধ্যমেই তুমি পরীক্ষায়ভালো রেজাল্ট করতে পারবেএবং তোমারপক্ষে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব,তখনই তুমি আগ্রহী হবে। আর আগ্রহথাকলে যেকোনো কাজে মনোযোগ
এমনিতেই আসে। অর্থাৎতোমাকে জানতে হবে যে, কেন এইকাজটা গুরুত্বপূর্ণ।
২) মনোযোগের একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আনন্দ।পড়তে বসার আগে একটু চিন্তা করো-
কী পড়বে,কেন পড়বে,কতক্ষণধরে পড়বে।প্রত্যেকবার পড়ারআগে কিছু টার্গেটঠিক করে নাও।যেমন, এত পৃষ্ঠা বা এতগুলো অনুশীলনী।তাহলে দেখবে তোমার সমস্ত মনযোগ ঐ পড়াটুকু কমপ্লিট করাতে নিবদ্ধ হবে।
৩) বিষয়ের বৈচিত্র রাখো।ভাগ ভাগ করে বিভিন্ন সাব্জেট পড়ো।একঘেঁয়েমি আসবে না।নিত্য
নতুন পড়ার কৌশল চিন্তা করো।রং বেরঙ্গের পেন দিয়ে বই দাগানোর অভ্যাস করতে পারো,এটিও পড়াকে আনন্দঘন করে তুলতে সাহায্য করে।
৪) এনার্জি লেভেলের সঙ্গে আগ্রহের একটা সম্পর্ক আছে।এনার্জি যত বেশি, মনোযোগ নিবদ্ধ করার ক্ষমতা তত বেশি হয়। আর অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীর দিনের প্রথমভাগেই এনার্জি বেশি থাকে। তাদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যে পড়াটা দিনে এক ঘণ্টায় পড়তে পারছে সেই একই পড়া পড়তে রাতে দেড় ঘণ্টা লাগছে। তাই কঠিন,বিরক্তিকর ও একঘেয়ে বিষয়গুলো সকালের দিকেই পড়ো। পছন্দের বিষয়গুলো পড়ো পরের দিকে। তবে যদি উল্টোটা হয়,
অর্থাৎ রাতে পড়তে তুমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধকরো,তাহলে সেভাবেই সাজাও তোমার রুটিন।
৫) আরেকটা কাজ করবে-একটানা না পড়ে বিরতি দিয়ে পড়বে।কারণ গবেষণায় দেখা গেছে,সাধারণত একটানা ৪০ মিনিটেরবেশি একজন মানুষ মনোযোগ দিতে পারে না।তাই একটানা মনোযোগের জন্যে মনেরওপর বল প্রয়োগ না করে প্রতি ৩০-৪০মিনিট পড়ার পর ৫-১০ মিনিটের একটা ছোট্ট বিরতি নিতে পারো।কিন্তু এ বিরতির সময় টিভি বা কম্পিউটার নিয়ে ব্যস্ত হবেনা যা হয়তো পাঁচ মিনিটের নামে দুঘণ্টা নিয়ে নিতে পারে।একটু ফেসবুকে ঢুঁ মারলে বা গান শুনলে,এই আরকি।
পড়তে পড়তে মন যখন উদ্দেশ্যহীনতায়ভেসে বেড়াচ্ছে-জোর করে তখনবইয়ের দিকে তাকিয়ে না থেকে দাঁড়িয়ে পড়ো।তবে রুম ছেড়ে যাবে না।কয়েকবার এ অভ্যাস করলেই দেখবে আর অন্যমনস্ক হচ্ছেন না।
৬) পড়ার পরিবেশ তোমার মনযোগ তৈরীতে তাৎপর্যপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে।তোমার চোখের পরিধির মধ্যে বই এর আশেপাশের কোনো আকর্ষনীয় বস্তু(যেমনঃছবি,শোপিস,মোবাইল) যেন চলে না আসে তা খেয়াল রাখতে হবে।এ জন্য সাদামাটা পরিবেশ এ(যেমন টেবিলে বসে বা বিছানায় হেলান দিয়ে) পড়ার চেষ্টা করতে হবে এবং উল্লেখিত বস্তু গুলোকে এ সময় দূরে সরিয়ে রাখতে হবে।
(৭) দিনে যখনি সময় পাবে ঐ দিনের টার্গেট করে রাখা পড়া টুকু করতে থাকো।এই টাইম পড়ার জন্য নয় ঐ টাইম পড়ার জন্য ভালো এসব কথা ভুলে যাও।.আর সবশেষে,যদি টার্গেটমতো পড়া ঠিকঠাক করতে পারো,তাহলে নিজেকে পুরস্কৃত করো,তা যত ছোটই হোক।
(৮) পড়তে বসলেই বাইরের হাজারো গুরুত্ববহ কাজের কথা মনে আসে।কিন্তু,সাবধান! পড়তে বসার আগে কোনো অসমাপ্ত কাজে হাত দেবে না বা সেটার কথা মনে এলেও পাত্তা দেবে না। চিন্তাগুলোকে বরং একটা কাগজে লিখে ফেলো।
(৯) আরেকটি জিনিস মনে রাখবে - পড়ার
জায়গায় যেন পর্যাপ্ত আলো থাকে। আলো পড়ার মনোযোগ বাড়ায়। পড়ার কাজে যে জিনিসগুলো লাগবে তার সবগুলোই নিয়ে বসো যাতে বার বার উঠে গিয়ে মনোযোগ বিক্ষিপ্ত করতে না হয়। বন্ধু রুমমেট বা বাসার কেউ তোমার মনোযোগে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে কি না খেয়াল করো।তাকে এড়ানোর জন্যে যথাসাধ্য কৌশল অবলম্বন করো,অন্যথায় তাকে সরাসরি ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলো।তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী হলে যেকোনো মূল্যে সে নিজেকে সংযত রাখবে।
***কোন বিষয় সহজে আত্মস্থ করার একটি চমৎকার পদ্ধতি হচ্ছে মন দিয়ে প্রতিটা লাইন পরার আগেই পুরো অনুচ্ছেদ টা একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া।দেখবে এরপর যখন মন দিয়ে পড়তে যাবে তখন বিষয়গুলো আর অচেনা মনে হবে না।এভাবে পড়ালেখাকে নিজেই নিজের মনের কাছাকাছি নিয়ে আসতে পারো।
মনে রাখবে - “তারাই বোকা,যারা একি কৌশল বার বার অবলম্বন করা সত্বেও প্রতিবার ভিন্ন ভিন্ন ফল আশা করে।”
No comments